‘স্বপ্নজয়ী মা’ হলেন রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মা অবিরণ নেছা

স্টাফ রিপোর্টার ♦ জাতীয়ভাবে ‘স্বপ্নজয়ী মা’ নির্বাচিত হয়েছেন রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মা মোছাঃ অবিরণ নেছা। সোমবার (১৩ মে) রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোডের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সম্মেলন কক্ষে ‘বিশ^ মা দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নির্বাচিত স্বপ্নজয়ী মা অবিরণ নেছাকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক, সনদ, প্রাইজবন্ড ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, মহিলা ও শিশু বিষয় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি এমপি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
জানা যায়, জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ডাংধরা ইউনিয়নের সোনাকুড়া গ্রামে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেন মোছাঃ অবিরণ নেছা। স্কুলে পড়ার সৌভাগ্য তার হয়ে ওঠেনি। অল্প বয়সেই তার বিয়ে হয় কৃষক ও ছোট ব্যবসায়ী মোঃ আলমাস হোসেনের সাথে। দরিদ্রতার মধ্য দিয়ে ছয় সন্তানকে নিয়ে চলে তাদের অভাবের সংসার। তিনি বাড়িতে ফলের গাছ ও সবজি চাষের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি, গরু, ছাগল-ভেড়া পালন করে স্বামীর অভাবের সংসারে হাল ধরেন। নিজে পড়াশোনা না করতে পারলেও সন্তানদের পড়াশোনার ব্যাপারে তিনি ছিলেন অত্যন্ত আগ্রহী। তিনি স্বপ্ন দেখতেন সন্তানেরা পড়াশোনা শেষ করে একদিন বড় অফিসার হবে। একটা সময় গিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ যোগান দেয়া তাদের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠলেও তিনি ভেঙ্গে পড়েননি। শত কষ্টের মাঝে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যান। এ নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সহ অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করলেও তিনি তার লক্ষ্য থেকে বিন্দুমাত্র পিছুপা হননি।
তার সন্তানদের মধ্যে চার জন দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রী শেষ করে বর্তমানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন। এর মধ্যে এক ছেলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। অবিরণ নেছার আরেক ছেলে মোঃ রেজাউল করিম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে রংপুরে কর্মরত রয়েছেন। ছোট ছেলে ডাঃ এস.এম. আরিফুল ইসলাম দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট মেয়ে নুরুন্নাহার নুরী সোনাকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়া অবিরণ নেছার বড় মেয়ে লুৎফা বেগম গৃহিনী ও বড় ছেলে মেহের জামান একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
স্বপ্নজয়ী মা অবিরণ নেছা জানান, সন্তানদের শিক্ষা দেওয়া ছিল আমার জীবনের সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টা। যেকারণে সন্তানদের সুশিক্ষিত ও আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি। সন্তানেরা এখন সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। আসলে এই ধরনের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত হবো কখনো ভাবিনি। আমি আমার সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা করেছি মাত্র, ফলাফল হিসেবে পেয়েছি সন্তানের সফলতা। আজ তার স্বীকৃতি স্বরুপ "স্বপ্নজয়ী মা" সম্মাননা পেয়ে আমার অনেক ভালো লাগছে।
ইতোপূর্বে অবিরণ নেছা জীবন সংগ্রামের স্বীকৃতি স্বরূপ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের 'জয়িতা অন্বেষণ কার্যক্রম' এর আওতায় ২০২২ সালে "সফল জননী" ক্যাটাগরিতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে মনোনীত হয়েছেন এবং পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব ডাংধরা কর্তৃক "রত্নগর্ভা মা" সম্মাননা স্মারকে ভূষিত হয়েছেন। তিনি আমাদের সমাজে সবার জন্য অনুকরণীয় একজন স্বপ্নজয়ী মা।