ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের তোপের মুখে থাকা রমেক হাসপাতাল পরিচালককে বদলী
স্টাফ রিপোর্টার ♦ রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে কর্মচারী ও ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের তোপের মুখে থাকা হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ শরীফুল হাসানকে বদলী করা হয়েছে। সোমবার (২৩ জানুয়ারী) বিকেলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ আলমগীর কবির স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ডাঃ শরীফুল হাসানকে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, ডাঃ শরীফুল হাসান।
এদিকে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ শরীফুল হাসানকে অপসারণের দাবীতে সোমবার বিক্ষোভ ও স্বারকলিপি প্রদান করে কর্মচারীরা। ৪ দফা দাবী বাস্তবায়নে পরিচালককে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয় ইন্টার্ণ চিকিৎসকরা। কর্মচারী ও ইন্টার্ণদের তোপের মুখে পড়ে হাসপাতালে আসেননি পরিচালক।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মচারী ও ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের বিক্ষোভ ও স্বারকলিপি প্রদান কর্মসূচীর খবরে সকাল থেকে হাসপাতাল চত্তরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বেলা ১২টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ করে ইন্টার্ণরা। পরে হাসপাতালের উপ-পরিচালক আ.খ.ম আখতারুজ্জামানকে ৪ দফা দাবী সম্বলিত একটি স্বারকলিপি দেন তারা। এতে ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের কর্মস্থল ও আবাসস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, ইন্টার্ণদের আইডি কার্ড প্রদান, ডাঃ মিলন হোস্টেলের জন্য কেনা আসবাবপত্র দ্রুত সরবরাহ, ডক্টরস ক্যান্টিনের মান্নোয়ন করার দাবী জানানো হয়।
ইন্টার্ণ চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডাঃ রাকিবুল হাসান তারেক বলেন, হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ শরীফুল হাসানের বিরুদ্ধে দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার কোন অভিযোগ নেই ইন্টার্ণদের। ইন্টার্ণ চিকিৎসক পরিষদের নাম ব্যবহার করে কে বা কারা হাসপাতালের মূল গেটে ব্যানার টাঙ্গিয়েছে। হাসপাতালের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে কোন মহল ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের নাম ভাঙ্গাচ্ছে। আমরা ৪ দফা দাবী জানিয়ে পরিচালক বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছি। এটি অবিলম্বে কার্যকর করা না হলে আমরা কর্মবিরতির মত আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
অপরদিকে সোমবার সকাল থেকে হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে হাসপাতালের ৩ শতাধিক কর্মচারী। এরপর তারা হাসপাতালের উপ-পরিচালকের কাছে তাদের দাবী সম্বলিত একটি স্বারকলিপি প্রদান করে।
হাসপাতালের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শাহীন হোসেন বলেন, হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ শরীফুল হাসান কর্মচারীদের অন্যত্র বদলীর হুমকি, আউট সোসিং নিয়োগে মূল্যায়ন কমিটির মতামতকে আগ্রাহ্য করে ও শিডিউল মোতাবেক স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করেনি। হাসপাতালের পরিচালকের অপসারণের দাবীতে আমরা বিক্ষোভসহ স্বারকলিপি প্রদান কর্মসূচী পালন করেছি।
এদিকে হাসপাতালে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। হাসপাতালের সামনে মেট্রোপুলিশের সাজোয়াযান রাখা হয়।
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) হোসেন আলী বলেন, হাসপাতাল এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
উল্লেখ্য, রংপুর মেডিকেল কলেজে দালাল ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেট রুখতে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন সমাবেশ করে সর্বস্তরের চিকিৎসকরা। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৬ কর্মচারীকে রমেক হাসপাতাল থেকে বদলী করা হয়। এরপর ২ অক্টোবর হাসপাতালের উপ-পরিচালকসহ ৩ কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারী হাসপাতাল পরিচালক সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মচারী অফিস সহায়ক মামুনুর রশীদ ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান নয়নের বিরুদ্ধে সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে হাসপাতালের স্বাভাবিক, স্পর্শকাতর, জরুরী বিভাগে জখমী সনদপ্রদান শাখা, অন্যান্য সরকারী কাজসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে বিধি বর্হিভ‚তভাবে হস্তক্ষেপ ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তোলেন। এরপর থেকে হাসপাতালে উত্তেজনা বাড়তে পারে।