রংপুরে গণঅবস্থানে বিএনপি, হাজারো নেতাকর্মীর ঢল
দেশের এতই উন্নতি হয়ে থাকে তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে এত ভয় কিসের
নভেল চৌধুরী ♦ আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন,আমরা রাজনীতি করি, আপনারাও রাজনীতি করেন। আপনাদের পেটোয়া বাহিনীর ওপর নির্ভর করতে হয় কেন। দেশের এতই উন্নতি হয়ে থাকে তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে এত ভয় কিসের। আপনাদের এত ভয় কিসের। সারাদেশ ব্যাপী রংপুরেও গণঅবস্থানে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
বুধবার সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়স্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচির আরম্ভ হয়। প্রধান অতিথি টুকু বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে মুাক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আমরা আবার যুদ্ধ করব। এই সরকারকে জনতার এই আন্দোলনের সামনে মাথা নত করতেই হবে। আমাদের ৪৩ হাজার কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। এই কর্মীরা যদি মাঠে নামে তাহলে এই সরকার আর টিকবে না। আমাদের আন্দোলন লাগাতার চলবে। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, শেখ মুজিব যখন ৭ই মার্চের ভাষণ দেন সেখানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। তিনি তার বক্তব্য শেষে জয় পাকিস্তান বলেছেন। যে বক্তৃতা জয় পাকিস্তান দিয়ে শেষ হয়, সে বক্তৃতা স্বাধীনতার ঘোষণা হতে পারেনা। তিনি বলেছিলেন আসুন বৈঠক করুন, আলোচনা করুন, ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। শেখ মুজিব আসলে স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি, তিনি পাকিস্তানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর চেয়েছিলেন। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানের হায়েনা বাহিনী আমাদের বাঙালিদের ওপর তাণ্ডব চালালো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এলোমেলো। কোন দিক নির্দেশনা নেই। ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ কমান্ডার জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। দিশেহারা বাঙালি নির্দেশনা পেয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এই হলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এখন আওয়ামী লীগ এমন ভাব করছে যেন মুক্তিযুদ্ধের সোল এজেন্সী তাদের। সোল এজেন্সী শুধু আওয়ামী লীগের নয়, মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, কামার-কুমোর, ছাত্রদের।
আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি ৫০ বছর আগে। আর আজ আমাদের কর্মসূচির সময়সীমা ৩ টা পর্যন্ত করে দিয়েছে। আমরা কি এজন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আমরা কি এমন গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম।
পুলিশদের উদ্দেশ্য করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য টুকু বলেন, আজকের গণঅবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন পয়েন্টে থামিয়ে হয়রানি করেছেন, আপনারা আমাকেও থামিয়েছেন। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। আপানাদের বেতন আওয়ামী লীগ সরকার দেয় না। দেশের রিক্সাওয়ালা, কৃষক, শ্রমিকরাসহ এদেশের ২০ কোটি মানুষ দেয়। আর আজকে আপনারা একটি দলের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছেন। মনে রাখবেন পাকিস্তানের সেনা আপনাদের চেয়েও শক্তিশালী ছিল। এদেশের বাঙালি সাহসিকতার সাথে লড়াই করে স্বাধীনতা এনেছিল। ক্ষমতার জোর দেখাবেন না। আপনাদের যে ক্ষমতা রয়েছে তা জনগণের ক্ষমতার কাছে কিছু না। আপনারা দেশের জন্য শপথ করেছেন, দেশের উন্নয়নের জন্য শপথ করেছেন কোনও রাজনৈতিক দলকে টিকিয়ে রাখার জন্য শপথ গ্রহণ করেননি।
তিনি আরও বলেন, এখন তো অনেক পুলিশ ভাইয়েরা ও আমাকে গোপনে বলেন যে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে তো আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসবে না। বিএনপি-ই ক্ষমতায় আসবে। এখন পুলিশরাও বোঝে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার কোনো সুযোগ নেই। এজন্যই আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে চায় না।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি হারুন অর রশিদ বলেন, এ সরকারের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে। এই সরকারের ক্ষমতার লোভ, মিথ্যাচার পুরো দেশকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। যারা আইন প্রয়োগে বৈষম্য সৃষ্টি করে তাদের জালিম বলা হয়। এ সরকার জালিম সরকার। আমরা সমাবেশ করলে হরতাল দেয়, আর তারা সমাবেশ করলে পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা। এই সরকার জনগণকে মিথ্যা অঙ্গীকার দিয়েছে। তারা ওয়াদা দিয়ে ভঙ্গ করেছে। যারা এমন করে তারা মুনাফিক। এই সরকার এখন জনগণের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সরকারকে জনগণ আর চায় না।
পুলিশদের উদ্দেশ্যে হারুণ বলেন, রংপুর পুলিশ লাইন্সে নৌকার মঞ্চ করে রেখেছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক থাকতে পারেনা। এটিকে ভেঙ্গে ফেলতে হবে। আপনারা এই সমাবেশের আসতে আমাদের পদে পদে বাধাগ্রস্থ করেছেন। এটা আপনারা ঠিক করেননি। আমরা থাকলেও আমাদের নামে মামলা হয়। দেশের বাহিরে থাকলেও আমাদের নামে মামলা হয়।
রংপুর মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু’র সভাপতিত্বে বিএনপি’র গণ অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি হারুন অর রশিদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্ট্রার রাজিব প্রধান, সাইফুর রহমান রানা, তাসভিরুল ইসলাম,শাহিদা রহমান জোসনা, বিলকিস ইসলাম, আক্তারুজ্জামান মিয়া, রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভাগের ৮ জেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।