গণপূর্তে বৈষম্যের শিকার আশরাফুল আলম

গণপূর্তে বৈষম্যের শিকার আশরাফুল আলম

নিউজডোর ডেস্ক : গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় হওয়াই কাল হয়েছিল গণপূর্ত অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের। তিনি জানান, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী থেকে সড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। আক্রোশে, তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দেওয়া হয়। নানাভাবেও করা হয় মানসিক হয়রানি। এসব অভিযোগ এনে তাকে অন্যায়ভাবে সরিয়ে দেয়া হয় বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, এ ষড়যন্ত্রের মুলহোতা ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তের ততকালীন সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার। আমার গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় হওয়ার ফলে তিনি (শহিদ) এমন অনৈতিক কাজ করেছিলেন। 
এদিকে, গণপূর্তের সাবেক এ প্রকৌশলীর আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে করা মামলায় যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছিল, সেটির একটিও প্রমাণ করতে পারেননি শহিদ উল্লাহ। বিভিন্ন নথিপত্র ঘেটে দেখা গেছে, উত্থাপিত অভিযোগ থেকে আশরাফুল আলমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
প্রকৌশলী আশরাফুল বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সচিব ছিলেন শহিদ উল্লাহ খন্দকার। গোপালগঞ্জে টুঙ্গি পাড়ায় গ্রামের বাড়ি, এ প্রভাবে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে বেশ দাপট দেখাতেন। কথায়-কথায় শেখ হাসিনার ভয় দেখিয়ে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিতেন। নিয়মকে অনিয়ম বানিয়ে গণপূর্তে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে করেছেন সীমাহীন দুর্নীতি। আর তার পছন্দের ছিলেন না—এমন প্রকৌশলীদের গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে নিয়মের তোয়াক্কা না করে অপসারণ করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কামিয়েছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। 
সাবেক সচিব শহিদ উল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেও নিজে, স্ত্রী-সন্তান, ছেলের বউ, ভাই-ভাইদের স্ত্রী, বিয়ান ও বিয়াইয়ের নামে বাগিয়ে নিয়েছেন অসংখ্য আলিশান প্লট-ফ্ল্যাট। এসব প্লট-ফ্ল্যাট বনশ্রী, পূর্বাচলসহ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকয় রয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 
সূত্র বলছে, বেআইনি ও নীতি বিরোধীভাবে অপসারণ করা হয় প্রকৌশলী আশরাফুল আলমকে। এর পেছনের কারণ ছিল আওয়ামী লীগের সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির রহস্য। আর, এর প্রতিবাদ করেছিলেন সে-সময়কার প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম। ফলশ্রুতিতে, আশরাফুল আলমকে বিএনপির তকমা লাগিয়ে দিয়ে অপসারণ (চলতি দায়িত্ব) করানোর মুলদায়িত্ব পালন করেন শহিদ উল্লাহ। জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস, গণপূর্ত অধিপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেম উদ্দিন, প্রদীপ বসু, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শংকর কুমার, নন্দীতা রানী সাহা, নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমারেরা ওই কাজ সংগঠিত হওয়ার যোগসাজশ সদস্য ছিলেন।
আশরাফুল আলম বিসিএস (পাবলিক ওয়ার্কস) ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের মেধা তালিকায় ছিলেন প্রথম স্থানে। নৈতিকতার কাছে আপস না করায় তিনি গত ১৫ বছর (আওয়ামী লীগ ক্ষমতা) নানা হয়রানির শিকার হন। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তিনি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর আশরাফুল আলমকে সড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (এইচবিআরই) মহাপরিচালক বিতর্কিত শামীম আখতারকে প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, তালিকায় ৭ নম্বরে থাকা শামীম আখতারকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না দেখিয়ে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদায়িত করা হয়েছে। অন্যদিকে, মেধা তালিকায় প্রথম স্থানে থাকলেও আশরাফুল আলমকে ডাম্পিং পোস্টিং হিসেবে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (এইচবিআরই) মহাপরিচালক করা হয়। 
এদিকে, গত চার বছর গণপূর্ত অধিদপ্তরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ বৃদ্ধমান শামীম আখতারের বিরুদ্ধে। অধিদপ্তরটির কয়েকজন প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা জানান, আশরাফুল আলম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। সিন্ডিকের আক্রোশ থেকে সামাজিক, আইনি ও মানসিকভাবে তাকে হেনস্তা হতে হয়েছে। তারা চাচ্ছেন, পুনরায় অধিদপ্তরে ফিরে আসুক আশরাফুল আলম। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকে যেনো, ফিরিয়ে দেন প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব। অধিদপ্তরটির বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়েও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শামীম আখতারের অপসারণ চান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের তিনজন প্রকৌশলী বলেন, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম অবশ্যই দক্ষ, মেধাবী ও চৌকাস একজন কর্মকর্তা। অধিদপ্তরে তিনি যতোদিন ছিলেন, নানা দিক দিয়ে উন্নয়ন ও অনেক সমস্য সমাধান লক্ষ্য করা গেছে। বগুড়ায় গ্রামের বাড়ি হওয়ায় আওয়ামী লীগের একটি চক্র ষড়যন্ত্র করে তাকে অধিদপ্তর থেকে সড়িয়ে দিয়েছেন। আর এই জঘন্যকাজ করার মুলে ছিলেন সাবেক সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার।