রংপুরে আরও ৭১৫ পরিবার পেল স্থায়ী ঠিকানা
স্টাফ রিপোর্টার ♦ মুই ইকসা (রিকশা) চালাও। জায়গা-জমিন নাই। আগোত আস্তাত (রাস্তা) ছিনু। নিজের থাকার ঘরও আছিল না। ইউএনও আপা মোক আস্তা থাকি তুলি আনছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকাঘর করি দিচে। মুই আস্তার মানুষ, এ্যলা পাকা ঘরোত থাকিম। এজনতে প্রধানমন্ত্রীর মোক শোবেচ্ছা (শুভেচ্ছা)। মুই খুব খুশি। গরীর মানুষ অত ভাল থাকিম, কোনোদিনও ভাবো নাই।’
রাস্তায় ঝুপড়ি ঘরে নয়তো কখনো খোলা আকাশের নিচে যার দিন কাটতো সেই রবিউল ইসলাম ওরফে রবি মিয়া প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পেয়ে আনন্দে ভাসছেন। নিজের অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ পেয়ে রংপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) এভাবেই বলেছেন তার অনুভুতি।
রোববার (২০ জুন) বেলা ১টায় রংপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে হরিদেবপুর ইউনিয়নের রিকশাচালক রবি মিয়ার হাতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের জমির দলিলসহ প্রয়োজনীয় কাজগপত্র তুলে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় সদর উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন একশ সুবিধাভোগীদের হাতে ঘরের চাবি ও জমির দলিল প্রদান করা হয়।
এ সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদিয়া সুমী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি, ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদার রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজলী বেগম, সদর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আবদুল মতিন, সহকারি ভূমি কর্মকর্তা রাসেল মিয়াসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন ঘরের চাবি। কাঁচা-পাকা বাড়ি। সঙ্গে জমির দলিল হাতে পেয়ে কাঁদতে থাকেন লেবু মিয়া। দু’চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে তার। আবেগে আপ্লত হন তিনি। রবিউল ও লেবুর মতো ভূমিহীন, গৃহহীন আরো অনেকের স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে।
মাথা গোঁজার স্থায়ী ঠিকানা হওয়ায় লেবু মিয়া বলেন, ‘এই সরকার গরীবের বন্ধু। এটা তো বিশ্বাস না করি উপায় নাই। মুই তো সরকার থাকি ঘর পানু। খুব ভালো নাগোচে। খালি ভুই কওলা আর রেজিস্ট্রি করতে সোগ মিলি ১৭শ টাকা নাগছে। এই টাকাতে প্রধানমন্ত্রী হামাক লাখ লাখ টাকার জমিজমাসহ পাকা ঘর করি দিলে। এই জনতে প্রধানমন্ত্রীক হামার ধন্যবাদ। আল্লাহ তাক যুগ যুগ বাঁচি থুক। ইউএনও আপা, চেয়ারম্যান আপাকও ধন্যবাদ। আজই থাকি হামরা একান স্থায়ী ঠিকানা পাইনো।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার দ্বিতীয় দফায় দেশের ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবারকে পাকা ঘরসহ বাড়ি ও জমি হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর গণভবন কার্যালয় প্রান্ত থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা, কুড়িগ্রামের সদর, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা থেকে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। সারাদেশের ৪৫৯টি উপজেলা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় নির্মিত এসব ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপরই অন্য জেলার মত রংপুরে জেলা এবং উপজেলা কর্মকর্তারা সুবিধাভোগীদের হাতে ঘরের চাবি ও জমির দলিল তুলে দেন।
রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান ঢাকা পোস্টকে জানান, রংপুরের আটটি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলার ১০০টি পরিবার, পীরগঞ্জে ১০০, পীরগাছায় ৪০, কাউনিয়ায় ২০০, মিঠাপুকুরে ৬৫, তারাগঞ্জে ১০০, বদরগঞ্জে ১০ এবং গঙ্গাচড়া উপজেলার ১০০টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন। তাদের সেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এসব ঘর নির্মাণ কাজ ও নির্মাণের মান তদারকি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেলার ভূমিহীন ও গৃহহীনকে দুই শতাংশ জমি দিয়ে ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি আধা পাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই ¯ স্লোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় যাদের জমি নেই, ঘর নেই তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি খাস জমিতে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
এর আগে প্রথম ধাপে জেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন ১ হাজার ২৭৩টি পরিবারকে ২ শতক জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলার সব ভূমিহীন ও গৃহহীনদের এ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।