লালমনিরহাটে জুয়েল হত্যাকান্ড : ৪ দফা দাবীতে রংপুরে সংবাদ সম্মেলন

নভেল চৌধুরী ♦ রংপুর ক্যান্টপাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক সহিদুন্নবী জুয়েলকে হত্যা ও লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় জুয়েলের পরিবার ও এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। শনিবার দুপুরে জুয়েলের শালবনস্থ বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৪ দফা দাবী জানানো হয়েছে।
দাবীগুলো হলো, জুয়েলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার মুক্তাকে একটি সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ দেয়া, জুয়েল হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত খুনীদের গ্রেফতার প্রক্রিয়া জোরদার করা, জুয়েল হত্যার বিচার প্রক্রিয়া দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালে করাসহ ন্যায় বিচারের স্বার্থে হত্যা মামলাটি রংপুরে স্থানান্তর করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী। এ সময় জুয়েলের স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৯ অক্টোবর লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে কোরআন অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে জুয়েলকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয় নাই, পাষন্ডরা ওর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে ভষ্মিভূত করে ফেলেছে। প্রকাশ্যে সংঘটিত এই ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে, উল্লাস করেছে এবং মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেছে। একটি সভ্য সমাজে আর গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনের দেশে এরকম ঘটনা বিস্ময়কর, অভাবনীয় ও গভীর উদ্বেগজনক।
ইউএনও, ওসি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য মহোদয়রা উপস্থিত থেকেও পশুদের নিবৃত্ত করতে পারেন নাই। উপরন্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের উস্কানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত করে ও ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলাম জুয়েল কে মারপিট করে শার্টের কলার ধরে টেনে হিচড়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যলয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু এই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জুয়েল শালবন এলাকার ছেলে। সে একজন সজ্জন, ভদ্র, শিক্ষিত, মার্জিত মানুষ হিসেবেই ওকে সবাই চিনত। রংপুর জিলা স্কুল, কারমাইকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সে শিক্ষালাভ করেছিল। সর্বোপরি সে ছিলো ধর্মপ্রাণ নামাজী ব্যক্তি। নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়ত। ঐদিন ঘটনার আগেও সে বুড়িমারীতে মসজিদে নামাজ আদায় করেছে।
জুয়েল হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রশাসনিক তদন্ত রিপোর্টে “ঐদিন সেখানে কোরআন অবমাননার কোন ঘটনা ঘটেনি” - বলে সরকারের পক্ষ থেকে জুয়েল কে কোরআন অবমাননার অপবাদ থেকে মুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি মূল দুই আসামীসহ বেশ কিছু আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই দুই ক্ষেত্রেই জুয়েলের পরিবার, মহল্লাবাসী এবং জনগণের পক্ষ থেকে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমরা আশা করছি, প্রশাসন যেভাবে সক্রিয় আছে, বাকী আসামীরাও দ্রুতই ধরা পড়বে এবং দ্রুত বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।
উল্লেখ্য, জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা ও লাশ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ফুসে উঠে রংপুরবাসী। এর প্রতিবাদে ৩০ অক্টোবর থেকেই বিক্ষুব্ধ আর উত্তাল হয়ে ওঠে মহল্লাবাসী, রংপুর তথা সারাদেশ। মানবন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি পেশসহ নানারকম কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনগণ এ নির্মম ঘটনার প্রতিবাদ করেছে, খুনীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবী করেছে।
০৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭.০০ টা থেকে ৭.০৫ পর্যন্ত পাঁচ মিনিট গোটা মহল্লায় বিদ্যুৎবাতি নিভিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে রাস্তায় দাড়িয়ে কর্মসূচি পালন করেছে মহল্লার নারী, শিশু, আবাল,বৃদ্ধ, বণিতা। ০৫ নভেম্বর মহল্লার সকল দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল সহকারে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে।